গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ   Saturday,27 April 2024

ইয়াসির আজমান: নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে ডিজিটাল সংযোগ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে

প্রত্যয় : আপনিই গ্রামীণফোনের প্রথম বাংলাদেশি সিইও। পুরোনো এই অনুভূতি নতুন করে শুনতে চাই।

ইয়াসির আজমান : ধন্যবাদ। গ্রামীণফোনের প্রথম বাংলাদেশি সিইও হওয়া নিঃসন্দেহে আমার জন্য সম্মানজনক একটি অর্জন। তবে এটি একই সাথে একটি গুরুদায়িত্ব যা সঠিকভাবে পালনের জন্য আমি সবসময় নিজের দক্ষতা উদ্ভাবনী সক্ষমতার উন্নয়নে কাজ করে চলেছি। তাই এটিকে একটি চ্যালেঞ্জও বলা যায়, যা আমি বেশ উপভোগ করি।

ডিজিটাল খাতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই খাতকে উত্তরোত্তর এগিয়ে নিতে সবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংযুক্তি ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। সংযুক্তি নিশ্চিত করার এই নিরলস চেষ্টায় নিবেদিত রয়েছে গ্রামীণফোন। আমাদের তরুণরা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হচ্ছে; আর প্রযুক্তিকে পুঁজি করে দেশ, সমাজ জনগণের এমন ক্ষমতায়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে পেরে গ্রামীণফোন অত্যন্ত আনন্দিত। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে আমি যে স্বপ্ন দেখি, সেই একই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা আমি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মীর একাগ্র দায়িত্ব পালনের মধ্যে খুঁজে পাই। আর সেটি হলো কানেক্টেড প্রযুক্তির মাধ্যমে সব স্তরে সব মানুষের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এখনই সময়।

প্রত্যয় : প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়নÑ বিষয়টি একটু খুলে বলুন।

ইয়াসির আজমান : গ্রামীণফোন মনে করে, মানুষের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে প্রযুক্তি। আর সেই প্রযুক্তি সবার জন্য উন্মুক্ত হতে হবে, সেখানে সবার সমান প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। ২৬ বছর আগে আমরা যখন যাত্রা শুরু করেছিলাম, তখন আমাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নারীদের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক সহজলভ্য করা। নারীদের ক্ষমতায়নকে গ্রামীণফোন বরাবরই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এসেছে। আমরা দেশের সবার জন্য শুরুতে কানেক্টিভিটি নিশ্চিতে কাজ করেছি। পর্যায়ক্রমে গ্রামীণফোন দেশের ৯৯ শতাংশের বেশি মানুষের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে।

এরপর প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিষয়েও গ্রামীণফোন নিরলস কাজ করেছে। আমরা থ্রিজি ফোরজির মতো প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে নিবেদিতভাবে কাজ করেছি। ফলে মানুষ এখন আরও বেশি ডিজিটালি সংযুক্ত থাকতে পারছেন, তাদের চিন্তা কাজের পরিসরও স্বাভাবিকভাবেই অনেকাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন সম্ভাবনা তৈরির ক্ষেত্রে ডিজিটাল সংযোগ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। আমরা দেখেছি, গ্রামীণফোনের দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে এখন টাঙ্গাইলের মধুপুরের বাসিন্দারাও ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আসা কাজ ঘরে বসে করতে পারছেন। এছাড়া আমাদের ডিজিটাল বুক ফেয়ার এবং স্কুলে ইন্টারনেট সুবিধা নিয়ে আসার প্রচেষ্টা জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলেছে। কুরবানির ঈদে অনলাইনে পশু কিনে এখন সময় বাঁচাচ্ছেন ঝামেলা কমাচ্ছেন অনেকেই। তাছাড়া দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা -কমার্স এফ-কমার্স উদ্যোক্তা, সেই সাথে সম্ভাবনাময় স্টার্টআপদেরও ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করে চলেছে গ্রামীণফোন।

এখন আমরা অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে কাজ করছি। আমরা মানুষের স্মার্ট লাইফের প্রয়োজন পূরণে বাড়ি, অফিস, যানবাহন, স্বাস্থ্য, কৃষি, শহর বায়োনিক্সসহ বিভিন্ন খাতে স্মার্ট প্রযুক্তির অনন্য সুবিধা নিশ্চিতের প্রত্যয়ে আমাদের নতুন আইওটি প্রোডাক্ট লাইন অ্যাপÑ আলো উন্মোচন করেছি যা জীবনযাত্রার প্রতিটি ধাপে স্মার্ট সল্যুশন নিশ্চিতে কার্যকরী ফলাফল বয়ে আনবেমানুষের জীবনকে আরও নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর সুখী করে তুলবে।

করোনাÑপরবর্তী সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনলাইনে বাজার করার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। স্মার্টফোন ব্যবহার করে মানুষ যানবাহনের ব্যবস্থা করছে, ঘরে বসে খাবার অর্ডার করছে, বিল পরিশোধ করছে। প্রযুক্তি এভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক বেশি সহজ স্বাচ্ছন্দ্য করে তুলছে। ফলে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় মানুষ এখন অনেক বেশি ক্ষমতায়নের সুবিধা আত্মনির্ভরতা উপভোগ করতে পারছেন।

 

গ্রামীণফোন ও বুরো বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। বিশেষ করে দেশের ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিত ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব তৈরিতে আমাদের অংশীদারিত্ব দারুণ ফলাফল বয়ে এনেছে।

- ইয়াসির আজমান

 

প্রত্যয় : গ্রামীণফোন প্রযুক্তিকে সাথে নিয়ে মানুষের ক্ষমতায়নে করতে চায়। বুরো বাংলাদেশের লক্ষ্য দেশের প্রান্তিক নারী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন। এই দুইয়ের মধ্যে কোনো সেতুবন্ধন খুঁজে পান কি না?

ইয়াসির আজমান : আমরা যখন যাত্রা শুরু করেছিলাম, তখন আমাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নারীদের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক সহজলভ্য করা। নারীদের ক্ষমতায়নকে গ্রামীণফোন বরাবরই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এসেছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে আমরাসেইফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথপ্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে লাখ তরুণ, বিশেষত প্রান্তিক নারী কিশোরীদের ডিজিটাল জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি অনলাইনে নিরাপদ থাকার ব্যাপারে সচেতনতা গঠনে কাজ আরম্ভ করেছি। আমাদের প্ল্যাটফর্ম শি-সহ অন্যান্য আপস্কিলিং উদ্যোগগুলোতেও নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ দেখা যায়। এছাড়াও প্রান্তিক অঞ্চলের নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতেইন্টারনেটের দুনিয়া সবারএই প্রকল্প গ্রহণ করি আমরা। এর মধ্য দিয়ে ২০০০ ইউনিয়নে নারীদের ইন্টারনেট বিষয়ে সচেতন প্রশিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে। এভাবে ডিজিটাল ক্ষেত্রে নারীর সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছি আমরা। আর এটি অবশ্যই প্রশংসনীয় যে, ঠিক একইভাবে দেশের প্রান্তিক নারী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে বুরো বাংলাদেশ। আমি বলব, এখানে নিঃসন্দেহে একটি সেতুবন্ধন রয়েছে, যা আগামীতে দেশ সমাজের কল্যাণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে। আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে, যাতে করে যে অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তা অর্জন সম্ভব হয়।

প্রত্যয় : গ্রামীণফোনের সাথে বুরো বাংলাদেশের কর্পোরেট সম্পর্ক বেশ পুরোনো। এই সম্পর্ক কতটুকু মজবুত? এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ কীভাবে উপকৃত হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?

ইয়াসির আজমান : সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে ইতিবাচক, বৈষম্যহীন ফলপ্রসূ সামাজিক রূপান্তরে সবসময়ই আগ্রহী গ্রামীণফোন। দেশজুড়ে আমাদের অসংখ্য অংশীদার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আমরা দেশের মানুষের উপকারের জন্য একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে বুরো বাংলাদেশের নামটিও উল্লেখযোগ্য। গ্রামীণফোন বুরো বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। বিশেষ করে দেশের ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিত আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব তৈরিতে আমাদের অংশীদারত্ব দারুণ ফলাফল বয়ে এনেছে।

দেশের আনাচে-কানাচে, প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার পাশাপাশি ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করেছে গ্রামীণফোন, যা ডিজিটাল বিশ্বের সাথে মানুষকে সংযুক্ত করা এবং তথ্য সেবার ক্ষেত্রে তাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছে। বুরো বাংলাদেশের আর্থিক সেবাও একইভাবে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে গেছে। এতে করে তাদের সক্ষমতা সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে। গ্রামীণ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জন্য শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণেরও উন্নত সুযোগ তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল সংযোগ মোবাইলভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আর্থিক সেবা গ্রহণ করে প্রান্তিক গ্রামীণ পর্যায়ে অনেকেই এখন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠছেন। তাই বলা যায়, গ্রামীণফোন বুরো বাংলাদেশের শক্তিশালী সম্পর্কের মধ্য দিয়ে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষই ক্ষমতায়িত হচ্ছেন।

প্রত্যয় : বুরো বাংলাদেশসহ দেশে বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় এমএফআই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণফোন এই প্রক্রিয়ার একটি অংশীদার। ভবিষ্যতে এই অংশীদারত্ব কোন মাত্রায় পৌঁছাতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ইয়াসির আজমান : বুরো বাংলাদেশসহ দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় এমএফআই অর্থাৎ মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার গ্রামীণফোনসহ সব অপারেটর। এই অংশীদারত্ব সহযোগিতা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে, যা দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে ইতিবাচক প্রভাব তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।  ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করার ফলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরও আর্থিক খাতে অংশগ্রহণ বাড়বে। সঞ্চয়, ঋণ, বীমা বা অন্যান্য আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে। এর ফলে ঋণ সেবা, অর্থ লেনদেন গ্রাহক সেবা প্রদান করা অনেক বেশি কার্যকর স্বাচ্ছন্দ্য হবে। তাছাড়া ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করা গেলে তথ্য সেবায় মানুষের প্রবেশাধিকার অংশগ্রহণ বাড়বে। ফলে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ক্ষেত্রেও তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের জন্য যদি ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করা যায় তবে এমএফআইয়েরও কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে। এমএফআই প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবনী বৈচিত্র্যময় পণ্য নিয়ে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাবে। মোবাইল ওয়ালেট, মাইক্রো-ইন্স্যুরেন্স, বিনিয়োগের সুযোগসহ বিস্তৃত আর্থিক সেবার সুযোগ তৈরি হবে। একই সাথে মাইক্রোফাইন্যান্সের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি নিরূপণ ঝুঁকির হার কমিয়ে আনা সহজ হবে; যা এই খাতকে টেকসই সম্ভাবনাময় হিসেবে হাজির করবে।

প্রত্যয় : দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস আরও যুগোপযোগী করতে এবং গ্রাহক সেবা আরও উন্নত করতে গ্রামীণফোনের আর কি কি উদ্যোগ গ্রহণ করার সুযোগ আছে বলে আপনি মনে করেন?

ইয়াসির আজমান : বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করা আর্থ-সামাজিক খাতে প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিশীল গ্রামীণফোন। দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা আরও যুগোপযোগী করতে গ্রাহক সেবা আরও উন্নত করার ক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের কিছু উদ্যোগ গ্রহণের জায়গা রয়েছে।

দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিটি মানুষকে আমাদের ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সবাইকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা গেলেই দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা প্রদান করা সহজ হবে। এই ডিজিটাল সেবা কার্যকরী উপায়ে সবার কাছে পৌঁছে দিতে তাদের শিক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রেও গ্রামীণফোন ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি জিপি একাডেমি এবং জিপি অ্যাকসিলারেটরের মতো উদ্যোগকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে চাই, কেননা এর মাধ্যমে আমরা একদিকে ফিউচার-ফিট অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতায় পরিপূর্ণ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলছি, সেই সাথে সম্ভাবনাময় সব ব্যবসায় উদ্যোগ এবং এর পেছনের পরিশ্রমী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি।

 

প্রান্তিক পর্যায়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছাড়া গ্রামীণফোনের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অনেকাংশে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। - ইয়াসির আজমান 

প্রত্যয় : গ্রামীণফোন উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাজ করে। বুরো বাংলাদেশের অন্যতম কাজও এটি। এক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগের কোনো সুযোগ আছে কি না?

ইয়াসির আজমান : জিপি অ্যাকসিলেরেটরের মতো নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যাত্রার শুরু থেকেই দেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে গ্রামীণফোন। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের তরুণ প্রতিভাবানদের উদ্ভাবনী ব্যবসায় আইডিয়াগুলোকে সঠিক দিকনির্দেশনা খাত সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দানের মাধ্যমেই আমরা ভবিষ্যতের জন্য সেরা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা যুগোপযোগী করতে সার্বক্ষণিক গ্রাহক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়াও আমদের প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়ে ডেইলি স্টার সিএসআর উইন্ডোর মতো আয়োজক আমাদের হাতেবাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৩তুলে দিয়েছেন। এই অর্জনগুলো আমাদের আরও নিবেদিতভাবে কাজ করে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

প্রশংসনীয়ভাবে বুরো বাংলাদেশেরও অন্যতম প্রধান কাজ এটি। প্রান্তিক নারী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে কার্যকরীভাবে কাজ করছে বুরো বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করলে এই সম্ভাবনাকে অনেক বেশি বিকশিত করার সুযোগ তৈরি হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছাড়া গ্রামীণফোনের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন অনেকাংশে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।  দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের হার আশানুরূপ রাখতে হলে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে আর উদ্যোক্তাদের সার্বিক উন্নয়ন বিকাশে সবরকম সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে গ্রামীণফোন।

প্রত্যয় : গ্রামীণফোন বুরো বাংলাদেশ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন দুর্যোগে প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের পাশে থাকে। আগামীতে সিএসআর কিংবা অন্য কোনো কার্যক্রমের মাধ্যমে যৌথভাবে এই দুই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ মানুষের পাশে থাকার সম্ভাবনা আছে কি না?

ইয়াসির আজমান : সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে নানারকম দুর্যোগ আর্তের প্রয়োজনে গ্রামীণফোন সর্বাত্মকভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করে থাকে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে আমরা ফ্রি টকটাইমসহ নানা সুবিধা ত্রাণ দিয়ে আসছি। এতে করে এসব মানুষের দুর্দশা কিছুটা হলেও লাঘব হয়; পাশাপাশি তারা তাদের স্বজনদের জানানোর সুযোগ পান যে তারা নিরাপদে রয়েছেন। কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারির সময় এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে গ্রামীণফোন সময়োপযোগী নানা উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সবসময় দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও আমরা জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব নেটওয়ার্ক তৈরিতে টেকসই সমাধানের উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করছি, যাতে আমরা আমাদের অংশীদারসহ সবার জীবনে এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারি। আমাদের প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় আমরা জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সঠিক নীতি প্রণয়নের গুরুত্ব নিয়ে কার্যকরী ফলপ্রসূ এবং ভবিষ্যৎকেন্দ্রিক আলোচনা তৈরিতে ভূমিকা রাখছি। অনলাইন নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল স্বাক্ষরতাকে আমাদের শিক্ষার সাথে সম্পৃক্তকরণ নিশ্চিত করা আমাদের শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য একটি অঙ্গীকার। কীভাবে নিরাপদে এবং দায়িত্বশীলভাবে ডিজিটাল জগতে বিচরণ করতে হয়, তা শেখানোর মাধ্যমে আমরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তোলার পাশাপাশি প্রযুক্তির পূর্ণ সম্ভাবনা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখি। এক্ষেত্রে একই সাথে আমরা তাদের সুরক্ষা সুস্থতা নিশ্চিতেও কাজ করি।

সম্প্রতি আমাদের পার্টনারদের সাথে আমরাইনক্লুসিভ ডিজিটাল ফিউচারনামে বেইজলাইন সার্ভের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সার্ভে পরিচালনা করা হয়, যার লক্ষ্য ছিল আটটি প্রত্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত কমিউনিটির জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণ, বিভিন্ন প্রতিকূলতা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে আলোকপাত করা। ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য ২৩ লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। এই জরিপের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত এক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ব্যবহার করেন যা সত্যি প্রশংসনীয়। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয় যে, সমাজ পরিবেশের জন্য গ্রামীণফোনের নিরলস প্রচেষ্টাগুলো এখন দেশ বিশ্ব পরিসরে স্বীকৃতি লাভ করছে। আমরা সম্প্রতি ব্লুমবার্গের সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থান অর্জন করে নিয়েছি।

প্রত্যয় : বুরো বাংলাদেশের সাথে গ্রামীণফোনের যৌথ পথচলা নিয়ে আপনার অভিমত কী?

ইয়াসির আজমান : বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে সমাজের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে গ্রামীণফোন বুরো বাংলাদেশ। সময়ের পরিক্রমায় এই সহযোগিতা অংশীদারত্বের পরিধি যেন আরও বৃদ্ধি পায়, আমি অবশ্যই তা কামনা করছি। গ্রামীণফোন বুরো বাংলাদেশ উভয়েরই লক্ষ্য দেশের জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখা সামগ্রিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। দেশের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি উন্নয়নে অবদান রাখতে চায় এমন সব প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনকে তাদের সহযোগী হিসেবে পাশে পাবে। আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পথচলার মধ্য দিয়ে দেশের কোটি মানুষের উন্নয়ন সাধিত হবে, এটিই গ্রামীণফোনের প্রত্যাশা।

 

ইয়াসির আজমান, প্রধান নির্বাহী, গ্রামীণফোন

দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে পদে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেধাবী নির্বাহী হিসেবে সুপরিচিত এই বাংলাদেশি এর আগে গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও এবং সিএমও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি পেশাজীবী ব্যক্তিত্ব যিনি গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করেছেন। ইয়াসির আজমান ভারত নরওয়েতে টেলিনর গ্রুপের সাথে কাজ করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি লন্ডন বিজনেস স্কুল এবং ইনসিড- ফ্রান্সের বিভিন্ন নির্বাহী প্রোগ্রামে যোগদান করেছেন।